নায়াগ্রা জলপ্রপাত
পৃথিবীর অপার এক প্রাকৃতিক বিস্ময় নায়াগ্রা জলপ্রপাত। পানি প্রবাহের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝর্ণা এটি। প্রায় 1200 বছর আগে সৃষ্টি হওয়া এই জলপ্রপাত থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় 40 লক্ষ ঘনফুট পানি পতিত হয়। প্রতিবছর প্রায় তিন কোটি লোক এই ঝরনাটি দেখতে আসে।নায়াগ্রা জলপ্রপাত ১৮৮০ এর দশকের শেষের দিক থেকে রোমান্টিক কৌতূহলের জন্য "বিশ্বের হানিমুন রাজধানী" হিসাবে পরিচিত, প্রায়শই নায়াগ্রাকে বিশ্বের "অষ্টম আশ্চর্য" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
নায়াগ্রা জলপ্রপাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং কানাডার অন্টারিও প্রদেশের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানার উপর অবস্থিত।
নায়াগ্রা শব্দটির উৎপত্তি "অঙ্গিয়ারা" শব্দ থেকে।যার অর্থ জলরাশির বজ্রধ্বনি। ঝর্ণার পানির স্রোতের শব্দ এতটাই তীব্র যে, এখানে অন্য কোন শব্দ আপনার কানেই ঢুকবে না।
এটি আমেরিকা এবং কানাডার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তাই সড়ক রেল ও বিমান সকল উপায়ে নায়াগ্রা পৌঁছানো খুবই সহজ। আমেরিকার ভূখণ্ড থেকে জলপ্রপাতটির সামনাসামনি দেখা যায় না। দেখতে হয় কিছুটা পেছন থেকে। জলপ্রপাত টি সামনে থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় কানাডার অংশ থেকে।
 |
| maid of the mist |
তবে আমেরিকার নায়াগ্রা নদীতে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে ঝরনা টি সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা যায়। maid of the mist নামে এক নৌকা পর্যটকদের এই অপার সৌন্দর্যের সান্নিধ্যে নিয়ে যায়। নায়াগ্রা জলপ্রপাত কোন একক ঝরনা নয়। এটি মূলত তিনটি জলপ্রপাতের সমষ্টি।
এই জলপ্রপাতের তিন ভাগের দুই ভাগ রয়েছে কানাডায়। এবং এক ভাগ আমেরিকায়। আমেরিকার অংশের নাম American falls. কানাডার অংশের নাম Canadian falls.কানাডা অংশে থাকার সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত টির নাম হল হর্সশু ফলস।
হর্সশু ফলস:উপর থেকে দেখতে এর আকৃতি অনেকটা ঘোড়ার খুরের মত হওয়ায় এর নাম দেওয়া হয়েছে হর্সশু ফলস। ঝরনার এই অংশটি 167 ফুট উঁচু এবং 2600 ফুট চওড়া। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের প্রায় 90 ভাগ পানি এই হর্সশু ফলস দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অ্যামেরিকান ফোরস:এখানকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধারণাটি হলো আমেরিকান ফলস। এর উচ্চতা প্রায় 70 ফুট এবং প্রশস্ততা 1600 ফুট।
নায়াগ্রা সবচেয়ে ছোট প্রবাহ টির নাম ব্রাইডাল ভেইল ফলস। এটি ও আমেরিকার মধ্যে অবস্থিত।
পৃথিবীর প্রায় সকল মিঠাপানির ২০ ভাগ জমা রয়েছে একাধিক লেকের সমষ্টি The great lakes এ। আর এই গ্রেট লেকস এর সিংহভাগ পানি প্রবাহিত হয় নায়াগ্রা জলপ্রপাত দিয়ে।নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বিশালতা ও সৌন্দর্যতার পাশাপাশি এর জলের ক্ষিপ্রতা একে করে তুলেছে ভয়ঙ্কর সুন্দর।
গ্রীষ্মকালে এই ঝর্না থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় 60 লাখ ঘনফুট এরও বেশি পানি প্রবাহিত হয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে এই প্রবাহে তারতম্য ঘটে। তবে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এর প্রতি মিনিটে প্রবাহিত পানির গড় প্রায় 40 লক্ষ ঘনফুট।
এত বিপুল পরিমাণ পানি ঘণ্টায় প্রায় 40 কিলোমিটার গতিতে পতিত হয়। নায়াগ্রার এই শক্তিশালী স্রোত কি কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমেরিকার নিউইয়র্ক এবং কানাডার অন্টারিতে সরবরাহ করা হয়।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বয়স প্রায় ১২ হাজার বছর। অতীতে নায়াগ্রা নদীসহ সমগ্র গ্রেট লেকস অঞ্চল বরফে ঢাকা ছিল। পৃথিবীর তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে এখানকার বরফ গলতে শুরু করে। তখন থেকেই নায়িকা নদী লেক ইরি এবং লেক অন্টারিও থেকে আসা বিপুল পরিমাণ পানির স্রোতে বিশাল এই জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে প্রায় প্রতিবছর তিন কোটি মানুষ নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে আসে। এখানে সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয় গ্রীষ্ম ও বসন্তকালে। কারণ এই সময়ে ঝর্ণাটির সেরা দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
প্রতিবছর শীতকালে নায়াগ্রা জমে বরফ হয়ে যায়। সে সময়ের ঝরনার কিছু অংশ দিয়ে সামান্য জলের জারি থাকে। তবে 1848 সালের মার্চ মাসে নায়াগ্রা জলপ্রপাত সম্পূর্ণ জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। সে বছর প্রায় 40 ঘণ্টা এই ঝর্না থেকে কোন পানি পড়েনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন