জেনে নিন টাকা জমানোর 23 টি কার্যকারী উপায় ও কৌশল



টাকা জমানোর উপায়


টাকা আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু! যে কখনোই প্রতারণা করে না। টাকার গুরুত্ব বুঝতে চাইলে কিছু টাকা ধার করে দেখতে পারেন। বর্তমানে বিশ্বের টাকার গুরুত্ব বোঝাতে যাওয়া বিশাল এক বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই টাকা জমাতে চান তাহলে একটি আয় থেকে প্রাপ্ত টাকার জমিয়ে বেশিদূর যেতে পারবেন না।






ধরুন আপনি চাকরি বা ব্যবসা থেকে প্রতিমাসে 30000 টাকা আয় করেন। যার মধ্যে 24 থেকে 25 হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আর বাকি থাকে 5 থেকে 6 হাজার টাকা মতো।


ধরে নিলাম প্রতিমাসে আপনি 6 হাজার টাকা করে জমাবেন। যদি আপনি সত্যিকার অর্থেই প্রতি মাসে 6000 টাকা করে জমা হয় তাহলে এক বছরে জমবে 72 হাজার টাকা। এভাবে যদি আপনি টাকা জমাতে থাকেষ তাহলে এক কোটি টাকার মালিক হতে আপনার সময় লাগবে 139 বছর।



টাকা জমিয়ে যদি সত্যিকার অর্থেই ধনী হতে চান তাহলে একাধিক আয়ের পথের কোন বিকল্প নেই। যদি আপনাদের একাধিক আয়ের পদ না থাকলে তাহলে এখন থেকে এভাবেই আয়ের পথ খোঁজার চেষ্টা করুন। এছাড়া আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে চাইলে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ করা অব্যাহত  রাখতে হবে।



তাই  আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে টাকা জমানোর কার্যকারী 11 টি উপায় তুলে ধরব। টাকা জমানোর উপায় এর টিপসগুলো আশা করি আপনাদের জীবনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। তাহলে চলুন জেনে নেই..



1.টাকা জমানোর মনোভাব গড়ে তুলুন


টাকা জমানোর চেয়ে খরচ করার মধ্যে আমরা বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। টাকা জমানোর মনোভাব গড়ে তোলার জন্য নিজেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা বা এমন কিছু স্বপ্ন দেখা যা মন থেকে টাকা জমানোর নেশা হয়ে যাবে।


2.ঋণ মুক্ত থাকুন


একদিক দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন এবং অন্য দিক দিয়ে টাকা জমাবেন এর সহজ মানে হচ্ছে ফুটো বালতিতে পানি ঢালা। আপনি যদি বর্তমানে ঋণগ্রস্ত থাকেন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করুন এবং পরবর্তীতে টাকা জমাতে মনোনিবেশ করুন।



3.কোথায় খরচ করে তা জেনে নিন


প্রতিমাসে আপনি কত টাকা ব্যয় করেন তা জানতে হবে। আপনার থাকা খাওয়া ও অন্যান্য খরচ কত হয় তা জানতে হবে। এই খরচ গুলোর খাতগুলো  যদি আপনি সঠিকভাবে জানতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে কথায় কথায় খরচ কমানো যায় তা আপনি বুঝতে পারবেন।



4.জরুরী খরচের টাকা সব সময় আলাদা রাখুন



যদি কাজের টাকা সবসময় আলাদা রাখার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে জরুরী কিছু দরকার এর জন্য সবসময় কিছু টাকা ক্যাশ রাখতে হবে। কেননা যেকোনো সময় জরুরি কাজের জন্য টাকা দরকার পড়তে পারে। হতে পারে কোনো দুর্ঘটনা অথবা কোন সুযোগ লুফে নেওয়া।


এই টাকা গুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় হাত দিবেন না।জরুরি প্রয়োজনের টাকা সব সময় আলাদা রাখতে পারলে টাকা জমানোর পদ্ধতি আপনার জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।



5.ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন জিনিস কিনুন



যে জিনিস আপনি অনেকদিন ধরে ব্যবহার করবেন তা কেনার আগে এর কোয়ালিটি যাচাই করে নিন। কোয়ালিটি সম্পন্ন জিনিসের কিছু টাকা বেশি লাগলেও কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন।



6.বাইরে খাওয়া ত্যাগ করুন


বর্তমানে আমাদের মধ্যে বাইরে খেতে যাওয়া একটি ট্রেডিশন হয়ে উঠছে। আপনি যদি টাকা জমাতেচান বা ভবিষ্যতে আর্থিক স্বাধীনতা লাভ করতে চান তাহলে বাইরে খাওয়া ত্যাগ করার সেরা সময় এই এখনই।


7.পোশাক ও ফ্যাশনে খরচ কমান



এই খাতটি আমাদের খরচের একটি বিশাল অংশ। টাকা জমা দিতে গিয়ে আমি আপনাদের বলবো না যে আপনি কোন ধরনের কেনাকাটা করবেন না। আপনি অবশ্যই পোশাক এবং ফ্যাশনের টাকা খরচ করবেন, তবে তা যেন খুব অতিরিক্ত না হয়ে যায়।


 মনে রাখবেন যদি আপনি জীবনে সফল হয় তবে আপনার ছেঁড়া লুঙ্গি ও জাদুঘরে ঠাঁই পাবে। আর ব্যর্থ হলে আজকের আপনার এই নামিদামি স্যুট প্যান্ট এরো কোনো মূল্য থাকবে না।



8.পরিবহন খাতে খরচ কমানো


আমাদের খরচের একটি অন্যতম বিশাল অংশ এম পরিবহন খাতে চলে যায়। আপনাকে যদি প্রতিদিন বাইরে যেতে হয় তাহলে পাবলিক বাস ব্যবহার করতে পারেন। হেটে যাওয়া রাস্তা হলে হেঁটেই চলে যান। এতে স্বাস্থ্য এবং পথ দুটি ভালো থাকবে।



9.ইলেকট্রনিক পণ্য খরচ কমানোর


ইলেকট্রনিক পণ্যের প্রতি আমাদের কমবেশি সবারই আসক্ত রয়েছে। আপনি যদি একটি কমদামি মোবাইল ব্যবহার করেন। এবং এই কম দামি মোবাইল দিয়ে যদি যাবতীয় কাজ হয়ে যায় তাহলে নতুন মোবাইলে কেনার শখ কে আপাতত মাটিচাপা দিয়ে দিন। আপনার মনকে বলুন আপনি একটা সময় নিজেই এ রকম ব্রান্ডের মালিক হবেন। এটি টাকা জমানোর সুন্দর একটা মন মানসিকতা তৈরি করে।


10.নিত্য দরকারি জিনিস কেনাকাটা খরচ কমান


কাঁচা বাজার বাদে  নিত্য দরকারি জিনিসপত্র একবারে কেনার চেষ্টা করুন। দোকানে যাওয়ার আগে একটা লিস্ট করে নিন এবং আপনার কি কি জিনিস কিনতে হবে তা লিখে নিন। এবং লিস্টের বাইরে একটি পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকুন।


11.অব্যবহৃত কোন পণ্য বা জিনিস বিক্রি করে দিন


যে সকল জিনিস আপনি এখন ব্যবহার করছেন না কিংবা দরকার হবে না এ সকল জিনিস বিক্রি করে দিন। এতে আপনার হাতে কিছু নগর টাকা চলে আসবে।


12.অনাকাঙ্ক্ষিত টাকা সাথে সাথে বিনিয়োগ করুন 


ধরুন আপনার চাকরি ব্যবসা কিংবা উপহার হিসেবে যেভাবে আসুক না কেন। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু টাকা হাতে পেলে এক মুহূর্ত দেরি না করে সাথে সাথে বিনিয়োগ করে ফেলুন।


13. কাজের জন্য লাঞ্চ কেনা বন্ধ করুন :

অধিকাংশ লোক তাদের দুপুরের খাবার কিনে খেতে পছন্দ করেন। যাতে তাদের সময় খরচ কম হয়। কিন্তু, আপনি যদি নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে খেতে পারেন তাহলে আপনি অনেক টাকা জমা রাখতে পারবেন। দোকানের খাবার ঘরের তৈরি খাবারের তুলনায় ব্যয়বহুল। তাই প্রতিদিন ঘরের তৈরি খাবার নেয়ার চেষ্টা করুন এতে আপনার শরীর ভালো থাকবে ও কিছু টাকাও বাচবে।


14. প্রতিদিন কফি কেনা বন্ধ করুন :

অনেকেই কফি ছাড়া কাজ করতে চায় না। তাদের কাছে কফি ছাড়া কাজ করতে গেলে নিজেদের অনেক দুর্বল মনে হয়। প্রতিদিন এক কাপ কফি অনেক বেশি খরচ করে যে তা নয়, কিন্তু বছর শেষে হিসাব করে দেখেন কফিতেই আপনার কত টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই ঘর থেকে বের হবার আগেই কফি খেয়ে নিতে পারেন এবং সাথে পানি রাখুন সবসময়। যাতে প্রয়োজনে পানি পান করতে পারেন।


15. ঝোঁকের বশে খরচ করা বন্ধ করুন :

এটা কঠিন বলে মনে হলেও অধিকাংশ মানুষ প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫০ থেকে ২৪০০ টাকা পর্যন্ত সেভ করতে পারে। আপনি এখন থেকে জমানো শুরু করলে বছর শেষে যেকোনো বিল ও ঋণ পরিশোধ করতে আপনার সুবিধা হবে।

আপনি প্রতি সপ্তাহে কিছু টাকা একটি খাম অথবা টপ এ রাখতে পারেন এবং সেটি আপনার চোখের সামনে রাখুন। এতে আপনার আগ্রহ বাড়বে ওখানে টাকা জমা রাখার।


16. আপনার ব্যাংক কার্ড ব্যাবহার বন্ধ করুন :

আপনি যদি প্রতিদিনই ব্যাংক থেকে টাকা তোলার অভ্যাস করেন, তাহলে টাকা জমানো সম্ভব হবেনা। সপ্তাহে নির্দিষ্ট একদিন টাকা তুলুন এক সপ্তাহের জন্য এবং তা হিসাব করে খরচ করুন। এতে আপনার অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতাগুলো দূর হবে।


17. ভ্রমন খরচ কমিয়ে ফেলুন :

বাহিরে ঘুরাফেরা করাতে আপনার খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। যাতায়াত খরচ, খাবার, পানীয় ইত্যাদিতে অনেক খরচ হয়ে যায়। তাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘরে বিশ্রাম নিন এবং বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে যান। এতে দেখতে পাবেন আপনার ব্যাংক এ টাকা জমানো সহজ হবে।


18. টাকা খরচের রেকর্ড রাখুন :

প্রত্যেক সপ্তাহের শেষে হিসাব করুন যে প্রতিদিন আপনি কতটুকু খরচ করেছেন। এতে আপনি আপনার সাপ্তাহিক খরচের হিসাবটি জানতে পারবেন। প্রতিদিন বাস এ যাতায়াত করুন। সপ্তাহ শেষে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, এই সপ্তাহে অপ্রয়োজনীয় কি খরচ করেছেন?


19. খাবারের তৈরির আগমুহূর্তে তা নির্বাচন করা বন্ধ করুন :

ঘরে খাওয়ার অভ্যাস করলে আপনার খাবার খরচ অনেক কমে যাবে।কারন, বাহিরের খাবার তুলনামূলক দাম বেশি। কোন খাবারটি খাবেন তা এক সপ্তাহের বাজারে একসাথে কিনে আনুন। কোনদিন কোন খাবারটি খাবেন তা আগে থেকে চিন্তা করে রাখুন। এতে আপনার টাকা জমা রাখতে সুবিধা হবে।


20. অনুমান করা বাদ দিয়ে জমানো শুরু করুন :

মানুষ যখন টাকা জমানো শুরু করে তখন সে যদি এই ব্যপারে নিশ্চিত হয় যে, তার কত দিনের মাঝে কত টাকা জমানো প্রয়োজন তাহলে টাকা জমানো সহজ হয়। তাই অনুমান না করে নিশ্চিত হয়ে টাকা জমানো শুরু করেন।


21.সঞ্চয়ের জন্য আলাদা করে রাখা: অনেকেই সকল খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটা সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করেন, যা ভুল পদ্ধতি। মানুষের প্রয়োজন কখনই ফুরায় না। ফলে সকল খরচ শেষ করার আগে অর্থই শেষ হয়ে যায়। তাই আগে নির্ধারণ করতে হবে মাসে কতটুকু সঞ্চয় করবেন। আর হাতে টাকা আসার পর সেই পরিমাণ অর্থ আলাদা করে রেখে দিতে হবে। এরপর যতটুকু অবশিষ্ট থাকবে সেটা দিয়ে মাসের খরচ চালানো চেষ্টা করতে হবে। এতে একসঙ্গে দুই কাজ হবে, মাসের শুরুতেই সঞ্চয় যেমন হবে তেমনি খরচের লাগাম টানার অভ্যাসও হয়ে যাবে।


22.প্রয়োজনীয়তার মাত্রা বোঝা: 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী সঞ্চয় করা উচিত। সেই সঙ্গে কোন খরচটা বেশি জরুরি সেটা চিহ্নিত করা জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয় করতে পারেন। যেমন বাড়ি কেনার জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে আগামী বছর একটি গাড়ি কিনতে চাইলে স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পনা করতে পারেন।


23.পরিমাণ অল্প হলেও চালিয়ে যাওয়া:

সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে একটি সচরাচর সবাই করেন, আর তা হল একবারে বড় অংকের টাকা জমানোর পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনার সময় প্রাত্যহিক খরচের কথা মাথায় রাখা হয় না। মনে রাখতে হবে, অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ এবং ধরে রাখার স্পৃহাই মুখ্য বিষয়।


বড় অংকের টাকা জমানোর জন্য নিজের উপর বাড়তি চাপ নেওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং এতে মাঝপথে সঞ্চয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যতটুকু আপনার পক্ষে সঞ্চয় করা সম্ভব সে অনুযায়ী লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আর একবার অভ্যাস হয়ে গেলে পরে আর অসুবিধা হয় না বললেই চলে।


Ram কি ? র‌্যাম কিভাবে কাজ করে এবং এর প্রকারভেদ?


প্রসেসর কি । কিভাবে কাজ করে এবং কেনার আগে কি দেখে কিনবেন







শেষ কথা


আশাকরি উপরের টাকা জমানোর টিপসগুলো গুলো আপনাদের কিছুটা হলেও টাকার জমাতে সহায়তা করবে। পোস্টটি ভাল লাগলে টাকা জমানোর উপায় এর এই ১১ টি টিপস বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ




0/Post a Comment/Comments